নানান দেশের জলের বন
আমাজনসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলের জঙ্গল দেখা যায়।
স্থানীয়ভাবে আমাজনে এ ধরনের জঙ্গলকে বলে ভারজিয়া। ব্রাজিলে আমাজনে জলে ডুবা
অরণ্যকে বলে ইগাপো। অবশ্য ভারজিয়া আর ইগাপোর মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারজিয়া
সাদা পানিতে ডুবা জঙ্গল, আর ইগাপো কালো পানিতে ডুবা বন। জিংগু, জারি আর
টাপাজোস নদী_যারা আমাজনের নিচের অংশে পানি ঢালে তারা খুব কম পলি বয়ে আনে।
ফলে এদিকটা পরিচিত ব্ল্যাক ওয়াটার রিভার নামে। আর আমাজন নদীর অন্য অংশ
সরাসরি আন্দিজ পর্বতমালা থেকে প্রচুর জৈব আর অজৈব পলি বয়ে আনে। তাই এটি
পরিচিত হোয়াইট ওয়াটার রিভার নামে। আমাজন নদীর মুখ থেকে শুরু করে টাপাজোস
নদীর মুখ পর্যন্ত বিস্তৃত বনগুলো পরিচিত গুরুপা ভারজিয়া নামে। এখানকার ঘাস,
লতা-পাতা, গাছ-পালার একটা অংশ অনেক সময়ই টানা কয়েক মাস আংশিক ডুবে থাকে
জলের নিচে। এই বনের গাছপালায় প্রচুর রসালো ফল হয়। যা এই সময় এখানে আস্তানা
গাড়া ফলখেকো মাছ, বাদুড় আর বানর জাতীয় প্রাণীর জীবনধারণে দারুণ ভূমিকা
রাখে। এই বনে বেশি চোখে পড়ে পাম জাতীয় গাছ, তরুমা প্রভৃতি বৃক্ষ। বেশ কয়েক
জাতের কচ্ছপ আর মাছও দেখা যায় এই বনে। কঙ্গো, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া,
ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও বেশ কিছু জলের
জঙ্গল আছে। কঙ্গোয় এ ধরনের বনকে একত্রে বলে পশ্চিম কঙ্গোলিয়ান সোয়াম্প
ফরেস্টস। কঙ্গোর এই অরণ্য দখল করে আছে গোটা পৃথিবীর মোট জলের জঙ্গলের বেশ
বড় একটা অংশ। বনের কোনো অংশ সব সময়ই জলে ডুবে থাকে, কিছু অংশ আবার
রাতারগুলের মতো বছরের একটা সময় পানির তলে থাকে। এখানে পাবেন জলে ডুবে থাকা
ঘাসের বনও। এই বনে বড় বড় গাছ যেমন চাঁদোয়া তৈরি করে, তেমনি নিচের
ঝোপ-জঙ্গলও থাকে বেশ ঘন। মাটি থাকে স্বাভাবিকভাবেই কাদাটে। এমনকি গরিলা আর
হাতির মতো বড় প্রাণীরও দেখা মেলে এখানে। মেঙ্েিকার পেনাটানোস ডি সেন্টলার
বনের একটা বড় অংশও বছরের কখনো কখনো পানির তলে থাকে। উসুমাচিন্তা আর
গ্রিজালভা নদীর ব-দ্বীপে জন্ম হয়েছে ১৭, ২০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই
অরণ্যটির। এই বনে দেখা পাবেন কুমিরের। এইসব বনে গাছ বাঁচে যেভাবে
প্রত্যেক উদ্ভিদ-প্রাণী চায় প্রতিযোগিতা এড়াতে। এ জন্য কোনো প্রাণী
নিশাচর। কারণ রাতে তাদের কম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। তেমনি কিছু কিছু
গাছ অভিযোজিত হয়েছে জলা এলাকার জন্য। এখানে অন্য গাছ জন্মায় না। তাই মাটির
পুষ্টি সংগ্রহে এসব গাছকে প্রতিযোগিতায় পড়তে হয় কম। এসব গাছ স্বাভাবিকভাবেই
পানিসহিষ্ণু হয়। পানিসহিষ্ণু কোনো কোনো গাছের আবার এরিয়াল রুট থাকে। এ
ধরনের শিকড় বায়ুর মধ্যে উন্মুক্ত থাকে। কোনো কোনো গাছের যেমন শ্বাসমূল
থাকে, তেমনি করচের থাকে বটের মতো ঝুড়ি। এটাও এক ধরনের এরিয়াল রুট। মূল শিকড়
পানিতে ডুবে থাকলেও করচ এই ঝুড়ির সাহায্যে সহজেই বাতাসের অক্সিজেন সংগ্রহ
করতে পারে।তথ্যসূত্রঃ১. কালেরকন্ঠ, ২
No comments:
Post a Comment